আট দফা ‘ঢাকা ঘোষণা’য় শেষ হলো জাতিহত্যা ও গণসহিংসতা নিয়ে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের। আট দফার একটিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, সেখানে রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সম্মেলনের তিনটি অধিবেশন শেষে সমাপনী সভায় ঢাকা ঘোষণা আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এ ঘোষণা দেন। এই সেন্টারের আয়োজনেই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকালে ‘দ্য পলিটিকস অব জেনোসাইড অ্যান্ড ট্রানজিশনাল জাস্টিস’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রথম দিনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক আশিস নন্দী। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বিশেষ আলোচক ছিলেন। পরে ‘প্রিভেন্টিং ভায়োলেন্ট এক্সিট্রিমিজম অ্যান্ড রেডিকেলাইজেশন’ শীর্ষক অধিবেশনে অধ্যাপক রওনক জাহানের সভাপতিত্বে অধ্যাপক আফসান চৌধুরী আলোচনা করেন। শেষ অধিবেশনে ‘জেনোসাইড অন দ্য রোহিঙ্গা মাইনরিটি’ বিষয়ক আলোচনায় রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জমিরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহসানুল হক অতিথি আলোচক ছিলেন।
তিনটি অধিবেশনে মোট নয়টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এসব প্রবন্ধে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংগঠিত গণহত্যার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক, চলমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, মিয়ানমারে জাতিগত নিধন, সেখানকার জবাবদিহিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। আগের দিন সংবিধানপ্রণেতা কামাল হোসেন, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেনের সভাপতিত্বে আলাদা তিনটি অধিবেশনে ১১টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
সমাপনী সভার সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ। অধ্যাপক আমেনা মহসীন সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
ঢাকা ঘোষণার শুরুতে জাতিসংঘের কাছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি করা হয়। ঘোষণায় বলা হয়, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, জাতিগত নিধন থেকে জনগণকে রক্ষায় রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। সবগুলো রাষ্ট্রই যেন এই গুরুত্ব যথাযথভাবে উপলব্ধি করে, সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উৎসাহ ও সহযোগিতা দরকার।
ঢাকা ঘোষণায় আরও বলা হয়, সারা বিশ্বে যেকোনো ধরনের জঙ্গিবাদ ও সহিংস চরমপন্থী কাজের নিন্দা জানাতে হবে। এগুলো মানুষের জীবন, জীবিকা ও শান্তির পথে বাধা। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে চাপে রেখে দ্রুত তাদের ওপর ঘটে যাওয়া সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানাতে হবে।