আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাস তিনেক বাকি। আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কে প্রার্থী হচ্ছেন, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রাইমারি থেকে নির্বাচিত হওয়া জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে দলের জাতীয় কনভেনশন থেকে। আগামী ১৭ থেকে ২০ আগস্ট উইসকনসিনে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কে আসছেন, তা নিয়ে দলের সমর্থকদের মধ্যে এখন জোরালো আলোচনা চলছে। আমেরিকার জনগণও তাঁদের রাজনৈতিক আলোচনায় বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। জল্পনকল্পনা ঠিক থাকলে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পাচ্ছেন। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় মিশ্রণের নারী দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে মনোনয়ন পাচ্ছেন।
আমেরিকার জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোট ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের। এ রাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থানও বেশ সংহত। আমেরিকার বর্তমান রাজনীতির গতিধারায় শ্বেতাঙ্গ নয়—এমন কেউ এবং কোনো নারীকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেওয়ার চাপ আছে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকেও সিনেটর কমলা হ্যারিস জো বাইডেনের চিন্তাধারার খুব কাছাকাছি। জো বাইডেনের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক এক সহযোগীর বরাত দিয়ে দ্য হিল নামের রাজনৈতিক সংবাদমাধ্যম এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলেছে, বাইডেন কমলা হ্যারিসকে সঙ্গে না নিলে আশ্চর্যই হতে হবে।
কমলা হ্যারিস কোনো কারণে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন না পেলে তালিকায় নাম রয়েছে আরও কয়েকজন নারীর। তাঁরা হচ্ছেন ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত আরেক উদারনৈতিক তারকা সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও জো বাইডেনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুজান রাইস। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসওমেন ক্যারেন বাসকেও সাম্প্রতিক সময়ে জো বাইডেনের প্রচারণায় গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে। কংগ্রেসওমেন ক্যারেন কংগ্রেসে ব্ল্যাক ককাসের নেতৃত্বে রয়েছেন। এ কারণে তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তিটাও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের মনোনয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ডেমোক্রেটিক পার্টির ব্যাপক লোকজন বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থক। প্রাইমারিতে বার্নি স্যান্ডার্স হেরে যাওয়ার পর তাঁরা এক চিঠিতে কংগ্রেসওমেন ক্যারেন বাসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তাঁদের পছন্দের কথা জানিয়েছেন।
জো বাইডেনকে ডেমোক্রেটিক পার্টিতে আমেরিকার উদারনৈতিক ধারার প্রতিনিধি হিসেবেই মনে করা হয়। প্রাইমারিতে দেখ গেছে, আমেরিকার মধ্যপন্থী লোকজন তাঁকে ব্যাপক সমর্থন করেছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির কৌশলবিদ ক্রিস্টি সেটজার এখানেই সমস্যা দেখছেন। গত এক দশকে আমেরিকায় ডেমোক্রেটিক পার্টির ভিত্তি অনেকটাই আর মধ্যপন্থায় নেই। অতি উদারনৈতিকেরাই ডেমোক্রেটিক পার্টির নতুন প্রাণ এবং ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পক্ষকে নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অতি উদারনৈতিকদের স্পষ্ট প্রতিনিধি অনেকেই দেখতে চাইছে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে।
জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে গড়ে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন জো বাইডেন। এমন জনমত জরিপ প্রচারণার জন্য সুবিধার হলেও অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন হতে পারে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির আরেক কৌশলবিদ জয়েল পাইন বলেছেন, এমন অবস্থায় জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট বাছাইয়ে ঝুঁকি নেবেন না। রাজনৈতিক মহলে পরিচিত কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনীত করা হলে কারও কোনো বিস্ময় থাকবে না।
প্রিংস্টন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জুলিয়ান জেলিজার মনে করেন, ঐতিহাসিকভাবে জনমত জরিপে সমস্যায় থাকা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের মধ্য দিয়ে চমক আনার চেষ্টা করা হয়, যা ২০০৮ সালে জন ম্যাককেইন করেছিলেন সারা পলিনকে মনোনয়ন দিয়ে। এবারে জো বাইডেনের জন্য এমন অবস্থা বিরাজ করছে না বলে তিনি মনে করেন। এ কারণে অনেকটাই ভেবেচিন্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারছেন জো বাইডেন। এ নিয়ে তাঁর ওপর কোনো চাপ নেই।
জনমত জরিপে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও করোনা মহামারির এ সময়ে ভোটারদের উদ্দীপ্ত করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াই প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গোঁড়া সমর্থকেরা এবারেও এ ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন নিয়ে এখনো জো বাইডেনের প্রচারণা শিবির থেকে সবদিকই বিবেচনা করা হচ্ছে। যেভাবেই হোক আসছে নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠেকাতে ডেমোক্রেটিক পার্টির সব পক্ষ একমত হলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে কতটা উদ্দীপনা আনতে পারবেন জো বাইডেন, এ আলোচনা চলবে আসছে কয়েক সপ্তাহ।