আমেরিকার আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। ১৭ আগস্ট থেকে চার দিনব্যাপী দলের ভার্চ্যুয়াল জাতীয় কনভেনশনে রোল কলের মধ্য দিয়ে ডেলিগেটরা প্রাইমারিতে জয়ী হয়ে আসা জো বাইডেনকে মনোনয়নের পক্ষে ভোট দেন।
ডেলিগেটদের এ রোল কল ভোটের পর জো বাইডেন সংক্ষিপ্ত উপস্থিতিতে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় স্ত্রী জিল বাইডেনসহ নাতি-নাতনিদের জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা যায়।
দলের জাতীয় কনভেনশনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এখন জো বাইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে আসছে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে লড়ছেন। দলের বাছাইপর্বের নির্বাচনে জো বাইডেনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন বার্নি স্যান্ডার্স। আমেরিকার উদারনৈতিক যুব-তরুণদের প্রিয় নেতা বার্নি স্যান্ডার্সের পক্ষে ১৮ আগস্ট সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন উদারনৈতিক তারকা ডেমোক্র্যাট আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ। তিনি বাইডেনকে অভিনন্দন জানান।
ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বনেদি সমর্থক ও অতি উদারনৈতিকদের মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠে গত বাছাইপর্বে। যুব-তরুণেরা ব্যাপকভাবে বার্নি স্যান্ডার্সের পক্ষে থাকলেও প্রাইমারিতে হেরে যান তিনি। অনেকেই ধারণা করছেন, জো বাইডেনের পক্ষে বার্নির সমর্থক যুব-তরুণেরা ব্যাপকভাবে নেমে আসবে না। দুই মাস আগেই এ দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করার জন্য দল একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটিতে কংগ্রেসওমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দলের কর্মসূচিতে নিজেদের উদারনৈতিক ভাবধারাকে কিছুটা হলেও সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন।
বার্নি স্যান্ডার্স ডেমোক্রেটিক পার্টির কনভেনশনের প্রথম দিন বক্তব্য দিয়েছেন। স্যান্ডার্স তাঁর বক্তব্যে দলের উদারনৈতিক প্রগতিশীল অংশকে মতপার্থক্য পাশে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করার লক্ষ্যে জো বাইডেনের সমর্থনে এগিয়ে আসার জন্য তিনি দলের সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
যে মুহূর্তে জো বাইডেন জাতীয় সম্মেলনে মনোনয়ন গ্রহণ করছেন, তখন জনপ্রিয়তায় তিনি জাতীয়ভাবে প্রায় সাড়ে সাত পয়েন্টে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। যদিও জুন মাসের শেষ দিকে তাঁর জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের চেয়ে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল বলে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে। এর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কিছুটা বেড়েছে।
এবারের নির্বাচনে ইলেক্টোরাল ভোটের যুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের মধ্যে ফ্লোরিডা, মিশিগান, উইসকনসিন এবং পেনসিলভানিয়াতে জো বাইডেন এখনো ট্রাম্পের চেয়ে গড়ে পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। অ্যারিজোনাতে এগিয়ে আছেন দুই পয়েন্টে এবং নর্থ ক্যারোলাইনাতে দুজনের অবস্থান সমান–সমান বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের জনমত জরিপে জানাচ্ছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশনের দ্বিতীয় দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। আমেরিকার জনগণের কাছে এখনো তুমুল জনপ্রিয় এ সাবেক প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে আমেরিকায় কোভিড-১৯–এর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কথা বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে বহু ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে আমেরিকায় ভাইরাসের এমন চরম আঘাত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। নিউইয়র্কের চাপাকুয়া থেকে দেওয়া বক্তব্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে থাকেন, আমরা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছি। অথচ আমরাই একমাত্র শিল্পোন্নত দেশ, যেখানে কর্মহীনতার সংখ্যা এখন তিন গুণ।’ এ সময়ে ওভাল অফিস (হোয়াইট হাউস) একটি কমান্ড সেন্টারের মতো হওয়া উচিত ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পরিবর্তে ওভাল অফিস হয়ে উঠেছে এক ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র। কেবলই বিশৃঙ্খলা।
ক্লিনটন বলেন, একটি বিষয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দায়িত্ব অস্বীকার করার প্রবণতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজের দায়িত্ব অন্যের ওপর চাপানোর প্রয়াসের কোনো পরিবর্তন আসেনি। তিনি আরও বলেন, ‘ডেমোক্রেটিক পার্টি জনগণকে ভিন্ন পছন্দ উপহার দিচ্ছে। একজন কাজের প্রেসিডেন্ট। বিনয়ে অবনত, কাজ সমাধানে পারঙ্গম, লক্ষ্য স্থির করা প্রেসিডেন্ট, দায়িত্ব গ্রহণ করার লোক। অন্যের ওপর দোষ চাপানো নয়, বিভেদ নয়, ঐক্য—এসব বিবেচনায় আমাদের পছন্দ জো বাইডেন।’ তিনি জো বাইডেনের সমর্থনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কনভেনশনে নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত সিনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা চার্লস শুমার বলেছেন, ‘আমরা আমাদের জাতীয় মর্যাদার এ লড়াইয়ে অবশ্যই জয়ী হব। জো বাইডেন এ কাজ একা করতে পারবেন না। ডেমোক্র্যাটদের আসছে নির্বাচনে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে হবে। আমরা এক থাকব। সবাই মিলে আমরা আমাদের দেশের নাটকীয় পরিবর্তন নিয়ে আসব।’
জো বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেন কনভেনশনে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘যে বোঝা আমরা বহন করছি, তা অনেক ভারী। আমাদের একটি শক্ত কাঁধ প্রয়োজন। বাইডেনের আমেরিকাকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা আছে। তিনি আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন।’ জিলের বক্তব্যের শেষে বাইডেন তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আমি জিল বাইডেনের স্বামী, আমার দেখা সবচেয়ে দৃঢ় নারী।’
কনভেনশনের দ্বিতীয় দিনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও তাঁর স্ত্রী, সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির মেয়ে, সাবেক রিপাবলিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটস, সাবেক মার্কিন সিনেটর জন কেরি, ম্যাসাচুসেটসের সিনেটের এলিজাবেথ ওয়ারেন প্রমুখ।