যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অস্টিনে সিরিজ পার্সেল বোমা হামলাকারীর পরিচয় প্রাকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম। দেশটির বিভিন্ন সংবাদমধ্যমে তাঁকে মার্ক অ্যান্থোনি (২৩) নামে উল্লেখ করা হচ্ছে বলে বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় পুলিশ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।
ফক্স নিউজকে দেওয়া বক্তব্যে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট বলেন, হামলাকারী অস্টিনের ২০ মাইল উত্তরে অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। তাঁর সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকা অন্য দুজনের সঙ্গে পুলিশ কথা বলেছে। তাঁরা কোনো রকমের অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন।
নিজেক উড়িয়ে দিলেও হামলাকারী ইন্টারনেটে তাঁর কার্যক্রম মুছে ফেলতে পারেননি বলে জানান গ্রেগ অ্যাবট। তিনি বলেন, অনলাইনে তাঁর কার্যক্রম মুছে ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে সে। সেসবের সূত্র ধরেই তাঁর আসল পরিচয় বের করা হবে। সে কে ছিল, কী করত এবং কেন সে এমন কাজ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যম ইউএস টুডে বলছে মার্ক অ্যান্থোনি ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অস্টিন কমিউনিটি কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন। তবে স্নাতক শেষ করতে পারেননি।
বিভিন্ন ব্লগে ২০১২ সালে মার্ক অ্যান্থোনির নামে কিছু লেখা প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম। এসব লেখায় তিনি সমকামী বিবাহের বিরোধীতা করেন। এছাড়া গর্ভপাতের বিষয়েও তিনি বিপক্ষে অবস্থান নেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অস্টিনে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বোমা হামলায় এক ব্যক্তি নিহত হন। সেখানকার পুলিশের বক্তব্য ছিল, তাঁদের অভিযানের মুখে ওই ব্যক্তি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশের কাছে তার একটি ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।
অস্টিনে মার্চেই এ পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচটি বোমা হামলা হয়। যার মধ্যে চারটিই ছিল পার্সেল বিস্ফোরণের ঘটনা। এসব হামলায় দুজন নিহত ও ছয়জন আহত হন। এ পাঁচটি বিস্ফারণের মধ্য চারটি অস্টিনে এবং একটি সেখান থেকে ১০৪ কিলোমিটার দক্ষিণের স্চেটজ শহরে ঘটে। গত সোমবার রাতে স্চেটজ শহরে ফেডেএক্সের গুদামে সর্বশেষে পার্সেল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার রাতের হামলার ঘটনায় পুলিশ ফেডেএক্সের সিসি ক্যামেরার ভিডিও থেকেই ওই ব্যক্তিকে প্রথম সন্দেহের তালিকায় আনে। পরে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তায় তাঁকে অনুসরণ করতে থাকে। অস্টিনের প্রাণকেন্দ্র রাউন্ড রকে অবস্থিত একটি হোটেলের কাছে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে পুলিশ। কিন্তু তাঁর আগেই সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজেকে উড়িয়ে দেয় বলে জানিয়েছেন অস্টিনের পুলিশপ্রধান ব্রিয়ান।
ব্রিয়ান আরও বলেন, সোমবার থেকে ২৪ ঘণ্টা ওই ব্যক্তি কোথায় ছিল, তা আমরা বলতে পারব না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে সে এ ধরনের আরও ডিভাইস কুরিয়ার করে থাকতে পারে।
এই ধারাবাহিক পার্সেল বোমা হামলার শুরুটা ২ মার্চ। রাজধানী অস্টিনে অ্যান্থনি স্টিফেন নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ২৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হন। এরপর ১৩ মার্চ অস্টিনে ঘটে পরপর দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা। প্রথম বিস্ফোরণে নিহত হন ড্রেইলেন উইলিয়াম মেইসন নামের ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর। তাঁর মা-ও এ ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। ড্রেইলেন ঘরের দরজায় একটি পার্সেলের মোড়ক দেখতে পান। পার্সেলটি খুলতেই এর বিস্ফোরণ ঘটে। এর কিছুক্ষণ পরেই ৭৫ বছর বয়সী এক হিস্পানিক নারী আরেকটি পার্সেল বিস্ফোরণে আহত হন।
১৮ মার্চ অস্টিনের রাস্তায় হাঁটার সময় দুই ব্যক্তি আহত হন। রাস্তায় পুঁতে রাখা বিস্ফোরক ডিভাইসে পা লাগলে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ সোমবার স্চেটজ শহরে ফেডেএক্সের গুদামে একটি পার্সেল বোম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ বিস্ফোরণে একজন আহত হন। সেখানকার পুলিশ বলছে, সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি একটি কার্টন নিয়ে ফেডেএক্স গুদামে প্রবেশ করে। যা পরে বিস্ফোরিত হয়। ওই পার্সেলটি অস্টিন যাওয়ার কথা ছিল।