‘জ্ঞানবাহন’ সেবা নিয়ে মানুষের দরজায়!

50

এআরআর/এইচআই

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা, কৃষি, আইনি পরামর্শ, নারীদের স্বাস্থ্যজনিত সেবাসহ অজানা তথ্য মিলবে প্রযুক্তিনির্ভর একটি গাড়িতে। গ্রামীণ জনপদের পিছিয়ে পড়া মানুষের দরজায় দরজায় যাবে এই গাড়ি। উদ্যোক্তরা এর নাম দিয়েছেন ‘জ্ঞানবাহন’।


১৬ জন নারী-পুরুষের অর্থায়নে এবং ইভ ফাউন্ডেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গ্রামীণ মানুষকে সেবা দিতে এই মহতী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, সেবাগ্রহীতাকে এই গাড়ি খুঁজতে হবে না, গাড়ির বাহক মানুষকে খুঁজে সেবা দেবেন।

রবিবার (২৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্চে ‘মিট দ্য প্রেস’-এ ইভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. বদরুল হুদা খান এসব তথ্য জানান।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে আগামীকাল সোমবার (২৬ নভেম্বর) জ্ঞানবাহনের উদ্বোধন করা হবে।

ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এবং জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক ও ই-লার্নিং বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল হুদা এই ‘জ্ঞানবাহন ধারণা’র প্রবক্তা। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের দেশের জন্য কিছু করতে চাই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমি কাজ করেছি। একটি গাড়িকে আমরা প্রযুক্তিনির্ভর করে সেটি নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে যাবো। গাড়িতে একজন বিশেষজ্ঞ থাকবেন, তিনি মানুষের সমস্যা শুনবেন, সে অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন, তথ্য দেবেন।’

 

 

 

 

প্রফেসর হুদা খান বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে জ্ঞানবিনিময় হবে। প্রান্তিক মানুষ অনেক বিষয় নিজেরা নিজেদের সমস্যা সমাধান করে। যেগুলো আমরা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের কৃষক ফসল ফলাতে অনেক কিছু নিজেরাই বাস্তবায়ন করেন, যেগুলো অনেক বিশেষজ্ঞও পারেন না। আমরা সেগুলো দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ‘জ্ঞানবাহনের’ মাধ্যমে পৌঁছে দিতে চাই।”

 

‘জ্ঞানবাহন’ কী
একটি লেগুনা বা মিনিবাস, যার জ্বালানি হবে পরিবেশবান্ধব সিএনজি অথবা ব্যাটারি। গাড়ির ভেতরে থাকবে এলইডি টিভি, ইন্টারনেট সংযোগ, ওয়াইফাই, ই-বুকস, ল্যাপটপ, প্রজেক্টর। গাড়ির চালককে বলা হবে জ্ঞানবাহক, তার সহকারী হবেন জ্ঞানবন্ধু এবং একজন বিশেষজ্ঞ (চিকিৎসক, আইনজীবী, সমাজকর্মী, শিক্ষক, কৃষিবিদ)। তিনি মানুষের সমস্যা শুনে পরামর্শ দেবেন। প্রয়োজন মতো তথ্য দেবেন। জ্ঞানবাহন থেকে তথ্য বা সেবা নেওয়া ব্যক্তিদের বলা হবে সেবাগ্রহীতা। এছাড়া গাড়িটিতে যখন যাত্রী বহন করা হবে, তখন চাইলে যাত্রীদের অনলাইন থেকে তথ্য দেওয়া হবে।

শুরুর কথা
প্রফেসর ড. বদরুল হুদা খান ই-লার্নিং বইয়ের লেখক। বইটি বিশ্বের ২২টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। দেশের গ্রামের মানুষ অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত, অথবা সেবা নিতে তারা কোথায় যাবেন, তাও তাদের জানা নেই। এই জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতেই ‘জ্ঞানবাহন’ ভাবনা মাথায় আসে। এরপর দেশে-বিদেশে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেন।ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার হাওড়ার বাউলিয়ায় প্রথম পরীক্ষামূলক ‘জ্ঞানবাহন’ শুরু করেন। সেখানে ব্যাপক সারা পান।একই সময় বাংলাদেশেও এটি নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। মালয়েশিয়া, নেপাল ও ইরাকেও এই ধারণায় সেখানকার নাগরিকরা আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানান ড. বদরুল হুদা।

যারা এই উদ্যোগে জড়িত
এই প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ইভ ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. বদরুল হুদা খান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহেলা আবেদীন। এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ড. মো. জাহাঙ্গীর খাঁন, তারেক হোসেন, শেখ মো. জুলফিকর বিপুল, পরিচালক মুসরাত জেবীন, উপপরিচালক তারিন মহিউদ্দিন আজিম, মাহফুজুর রহমান, সাঈদা তানিম, আন্দালীব আশেয়া আজীম, মো. মোস্তাক, ফারানাজ কাইয়ূম, পারভেজ আলম চৌধুরী, মহসীনুল আবেদীন, রেদওয়ান চৌধুরী ও সুলতানা রোজী। কোনও এলাকার মানুষ যদি ‘জ্ঞানবাহন’ তাদের নিজেদের এলাকায় শুরু করতে চান তাহলে ইভ ফাউন্ডেশন সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া যে কেউ এই উদ্যোগে সহযোগিতা করতে পারবেন।

ইভ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক তারিন মহিউদ্দিন আজিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নিজেদের উদ্যোগে কাজটি শুরু করেছি। গাড়িটি সপ্তাহে পাঁচ দিন সড়কে চলবে। এসময় যাত্রীরা সেবা নিতে পারবেন। বাকি দুদিন গাড়িটি হাটহাজারীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হবে। একেকটি এলাকায় একেকদিন যাবে গাড়ি। যেখানে যাবে, সেখানেই ‘জ্ঞানবাহন চা আড্ডা’ হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আনুষের মধ্যে জ্ঞানবিনিময় হবে। কারো বিশেষ কোনও আবিষ্কার আমরা ভিডিও করে তা অন্যত্র দেখাবো। আবার বড় প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় পরামর্শ দেওয়া হবে।’
ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহেলা আবেদীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ প্রযুক্তিগত সাশ্রয়ী দূষণমুক্ত ও অর্থপূর্ণ উন্মুক্ত জীবনব্যাপী গণশিক্ষার আসর। স্বল্প ব্যয়ে চটজলদি ভ্রাম্যমাণ যুক্তিনির্ভর শিক্ষার আয়োজন করবে ‘জ্ঞানবাহন’। পরিবেশবান্ধব ও প্রযুক্তি সুবিধাযুক্ত এই বাহন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আধুনিক প্রগতিশীল শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত করতে সহায়ক হবে।’

প্রফেসর বদরুল হুদা খান বলেন, ‘এ ধারণা প্রকাশ হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সাড়া পাচ্ছি। তবে আমি চাই আমার দেশে এটি আগে প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই আমরা নিজেরাই অনেক কিছু পারি।’

উদ্যোগটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।