কামালা হ্যারিসেও রাজি ডেমোক্র্যাটরা

51
ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে আনুষ্ঠানিক নাম ঘোষণার পর উচ্ছ্বসিত কামালা হ্যারিস ও তাঁর স্বামী ডগলাস এমহফ। ছবি: রয়টার্স

ডেমোক্রেট দলের জাতীয় কনভেনশনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে সিনেটর কামালা হ্যারিসের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমেরিকার কোনো প্রধান দল থেকে কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত নারীর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নের ইতিহাস রচিত হলো।

আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করে কনভেনশনের তৃতীয় দিন ১৯ আগস্ট কামালা হ্যারিস তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, লড়াকু ও ভুলে যাওয়া মানুষের সংগ্রাম তাঁর জানা। ন্যায় বিচারের সংগ্রাম কোনো একার সংগ্রাম নয় উল্লেখ করে তিনি সবাইকে নিয়েই এ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

কনভেনশনে ১৯ আগস্ট দেওয়া বক্তব্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদের জন্য একদম অযোগ্য ব্যক্তি। জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

ফিলাডেলফিয়ার মিউজিয়াম অব আমেরিকা থেকে দেওয়া ভার্চ্যুয়াল বক্তৃতায় বারাক ওবামা আমেরিকার নাগরিকদের নিজের ক্ষমতার প্রতি সচেতন থাকার আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কার্যক্রম আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য হুমকির কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে নির্বাচনে জয়লাভ করতে চায়। নির্বাচনের আর ৭৬ দিন বাকি। জো বাইডেন ও কামালা হ্যারিসকে ভোট দিয়ে জয়ী করতে হবে। আমেরিকা যে মূল্যবোধ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তা রক্ষার জন্য ডেমোক্রেট প্রার্থীদের আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি উৎসাহ নিয়ে ভোট দিতে হবে।

সাবেক প্রেসিডেন্টরা স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টকে আক্রমণ করে সরাসরি বক্তব্য প্রদান এড়িয়ে চলেন। বারাক ওবামাই প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট, যিনি সরাসরি ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করলেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ, নাগরিক আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের নামে তাঁর ভূমিকা, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যবহার নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন বারাক ওবামা।

বারাক ওবামা বলেন, ‘আশা করেছিলাম দেশের স্বার্থে নিজের কাজকে নিষ্ঠার সঙ্গে নেবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি তা কখনোই করেননি। প্রায় চার বছর থেকে ট্রাম্প এমন কোনো কাজ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।’ ‘সবার জন্য সাধারণ কল্যাণ’ ট্রাম্প খুঁজে পেতে চেষ্টা করেননি। ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতা নিজের ও বন্ধুদের সাহায্যের জন্য ব্যবহার করেছেন।

১৯ আগস্ট রাতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্য দেওয়ার আগেই সেই বক্তব্যের সারাংশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস কনফারেন্সে একজন সাংবাদিক এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ওবামা ও বাইডেনের কারণেই আমি আজ এখানে। তাঁরা ভালো কোনো কাজ করেননি বলেই লোকজন আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন।’

কনভেনশনে দেওয়া বক্তব্যে কামালা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বর্ণবৈষম্যের কোনো ভ্যাকসিন নেই। এর অবসানে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য একযোগে কাজ করতে হবে এবং সমষ্টির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো একক ব্যক্তির মুক্তি হয় না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Democratic presidential candidate, former Vice President Joe Biden, speaks during a campaign event, Tuesday, July 14, 2020, in Wilmington, Del. (AP Photo/Patrick Semansky)

কনভেনশনের তৃতীয় দিনে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনসহ গুরুত্বপূর্ণ ডেমোক্র্যাটরা বক্তব্য দেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে যাওয়া হিলারি ক্লিনটন বলেন, প্রত্যাশা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের জানা আছে একজন প্রেসিডেন্ট কেমন হয়ে থাকেন। আমেরিকার জন্য এখন একজন ত্যাগী এবং সেবার মানসিকতার নেতার আজ প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ডাকযোগে ভোট দিলে এখনই ব্যালট পাঠানোর আবেদন করার জন্য হিলারি ক্লিনটন আহ্বান জানান। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিলে যেন আগেভাগেই কেন্দ্রে যান, সঙ্গে একজন বন্ধুকে নিয়ে যাওয়া এবং মাস্ক পরার জন্য তিনি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন জনপ্রিয় ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ইলেকটোরাল ভোটে তিনি হেরে যান।

চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে এবার আমেরিকার নির্বাচনে আগের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভোট ডাকযোগে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনিতেই আমেরিকার লোকজনের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার হার কম। করোনা মহামারির এ সময়ে ডাক ভোটের ব্যাপক তোড়জোড় এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে। কোনো কোনো রাজ্যে আগামী মাস থেকেই ডাকযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আগে থেকেই বলে আসছেন, ডাকযোগের ভোটে এবারের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হবে। ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবির থেকে এর মধ্যেই বেশ কিছু রাজ্য সরকারের সঙ্গে ডাক ভোটের নানা ব্যবস্থা নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়ে গেছে।

১৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ডেমোক্রেট দলের চার দিনের সম্মেলনের শেষ দিন ২০ আগস্ট। এদিন সন্ধ্যায় দলের মনোনীত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বক্তৃতা দেবেন। এরপরই শুরু হবে মাঠের লড়াই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর মধ্যেই চষে বেড়ানো শুরু করেছেন। করোনা মহামারি মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যর্থতাকে নিয়ে ডেমোক্রেট দলের তীব্র আক্রমণের জবাব দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং আমেরিকার নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য তাঁর বিকল্প নেই, এ কথাটি ট্রাম্প বলছেন নিজের মতো করে।