রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও সেনা নেতৃত্বের বিপরীতমুখী অবস্থান দেখলেন। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি গতকাল সোমবার বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তাঁর সরকার তৈরি। তবে প্রত্যাবাসনে গতি আনতে হলে বাংলাদেশের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। অন্যদিকে, দেশটির সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং অভিযোগ করেছেন, রোহিঙ্গাদের কারণে রাখাইনের ‘সংকট জটিল’ হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও সেনা নেতৃত্বের এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রোহিঙ্গা সমস্যা যে আরও দীর্ঘায়িত হবে গতকাল নেপিডোতে পৌঁছেই বুঝেছেন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। পাশাপাশি কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে রাখাইনে তাদের এবং তাদের আপনজনদের ওপর যে বর্বরতার কথা শুনেছেন, তা বেমালুম অস্বীকার করেছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, মিয়ানমার সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলটি রাখাইনে যাবে। জাতিসংঘে পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি গুস্তাভো মেজা কোয়াদ্রার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটিকে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম ও শরণার্থীদের জন্য তৈরি অভ্যর্থনা কেন্দ্রে নেওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশে তিন দিনের সফর শেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলটি গতকাল দুপুরে নেপিডোতে পৌঁছায়। সেখানে প্রথমে তারা মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং পরে দেশটির স্টেট কাউন্সেলরের সঙ্গে বৈঠক করে। সিনিয়র জেনারেল অং হ্লাইং এবং অং সান সু চির ফেসবুক পেইজে ছবি দিয়ে স্থানীয় ভাষায় বৈঠকের খবর প্রচার করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়ার মিয়ানমারে বিশেষ প্রতিনিধি মে ওং তাঁর টুইটে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলের বৈঠকের প্রসঙ্গ ইংরেজিতে লিখেছেন। সু চির সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি টুইটে বলেছেন, সু চি প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সরকার যে তৈরি সেটা উল্লেখ করেছেন। তবে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় গতি আনতে বাংলাদেশের কাছ থেকে আরও সহযোগিতার কথা তিনি প্রতিনিধিদের বলেছেন। সু চি তাঁদের এটাও বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ আবেদনের যে ছক পূরণ করে পাঠিয়েছে, তা অসম্পূর্ণ।
সু চি প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলার জন্য সরকারের প্রস্তুতি, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা, সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, তাদের নাগরিকত্ব, জাতীয়তা যাচাইপত্র ইত্যাদি প্রসঙ্গ তুলেছেন বলে টুইটে লিখেছেন মে ওং।
মে ওং টুইটে বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় রাখাইনে সামরিক বাহিনীর অভিযান, সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি, জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন করা এবং বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ পুনর্বাসনের কথা বলেছেন। সেনাপ্রধান নিরাপত্তা পরিষদকে শুধু রোহিঙ্গাদের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে সব নৃগোষ্ঠীর ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের বিষয়টিও বিবেচনার আহ্বান জানান। নৃগোষ্ঠীর ওপর জঙ্গিদের তথাকথিত নৃশংসতার ছবি দেখিয়ে সত্য খুঁজে বের করারও আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ইতিহাসে ধর্ষণের কোনো ঘটনা নেই। কারণ, সংস্কৃতি আর ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্ষণ অমর্যাদার বিষয় এবং যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেনাপ্রধান বলেন, রাখাইনের সংকট জটিল হয়েছে ‘বাঙালি’ (রোহিঙ্গা) ‘সন্ত্রাসীদের’ কারণে। সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে পদক্ষেপ নিচ্ছে আর যারাই আইন লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।