Azadul Haq, Texas
ছোটবেলার মুখস্থবিদ্যার ওপর দিয়েই শুরু আমাদের ইসলামের ভিত্তি। মসজিদের ইমাম হোক, স্কুলের ইসলামিয়াত স্যার হোক বা অন্য কোন মুরুব্বী হোক কারো কাছেই ইসলাম নিয়ে উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করলে খবর ছিল। একটা যেন অলিখিত আইন ছিল যে ধর্ম নিয়ে, বিশেষ করে ইসলাম নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। যা পড়তে বলা হয়েছে তাইই পড়তে হবে – অর্থ বুঝি না বুঝি সেটা কোন ব্যাপার না। “কিতাবে লেখা আছে”ব্যস, পড়তে হবে! কিন্তু কে লিখেছে কিতাব, কেন লিখেছে, কবে লিখেছে এইসব জিজ্ঞেস করলে শুধু শুধু কানটাই লাল হত আর কোন লাভ হত না।
এরপর স্কুলে দিয়ে টুকটাক অর্থ বোঝা শুরু করলাম আরবীভাষার। কোরআনের সুরা, হাদিথ, মোনাজাত, নামাজের দোয়া এসবের বাংলা অর্থ শিখলাম, তাও অল্প স্বল্প। এবার অন্তত বুঝলাম কি তেলাওয়াত করছি। কিন্তু মন তো মানে না। আরো তো জানতে চাই। কত যে হাজার রকম প্রশ্ন মাথার মধ্যে গিজগিজ করে তার উত্তর দেবে কে? এইসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করাটাই তো এক চ্যালেঞ্জ, উত্তর বের করা তো আর কঠিন। আর তাছাড়া সেটা যে সঠিক উত্তর তারই বা গ্যারান্টি কে দেবে? শেষমেশ নিজেই খোঁজাখুঁজি শুরু করলাম এবং এখনো করছি। আমার অনেক প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই। তবে এটা বুঝেছি যে উত্তর না থাকলেও অসুবিধা নেই। এই যে প্রশ্নটা করতে পারছি এতেই আমার যা জানার তার অনেকটাই জানা হয়ে গেছে। আর সবচেয়ে বিশাল ব্যাপার হল যে আল্লাহ তায়ালা নিজে এই জাতের মানুষ যারা প্রশ্ন করবে, কারণ খুঁজবে, যুক্তি খুঁজবে তাদের কথা কোরআনে বহু জায়গায় বলে রেখেছেন। তিনি জানেন, কিছু মানুষ ঠিকই তাকে খুঁজবে পাতায় পাতায়, আয়াতে আয়াতে, অক্ষরে অক্ষরে। তাদের যে তিনি শুধু পছন্দ করেন তা নয়, তাদের জন্য বিশেষ বিশেষ জায়গায় তিনি ইঙ্গিত, সূত্র রেখে দিয়েছেন যত্ন করে।
এবার ফিরে যাই প্রথমে। প্রথম কলেমা তো বুঝলাম। সহজ সরল ব্যাপার –“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” যার অর্থ “আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই এবং মোহাম্মদ (সঃ) তাঁর রসুল”। এটা একটা বিশ্বাসের বিবৃতি এবং এখানে না বোঝার কিছু নেই।
এবার আসি দ্বিতীয় কলেমায়। এইখানে এসেই আটকে গেলাম। দ্বিতীয় কলেমা হল – “আশহাদু আ্ল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মোহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুল্লাহ” মানে “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মোহাম্মাদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রসুল।”
আমি দেখতে পাচ্ছি অনেকের ভ্রু কোচকানো শুরু হয়ে গেছে। তারা হয়ত ভাবছেন এটা ভুল। এখানে কিছু শব্দ বাদ পড়ে গেছে। আপনি ঠিকই দেখেছেন। কারণ আমি বহু জায়গায় ঘাটাঘাটি করে দেখেছি যে বিশেষ করে এশিয়ায় বা যেখানে দেওবন্দী মাদ্রাসার প্রভাব আছে, সেখানে কয়েকটা শব্দ বেশী যোগ করা হয়েছে তা হলো – “ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু” যার অর্থ হচ্ছে “এবং তিনি এক ও তার কোন শরিক নেই”। এই শব্দগুলো আবার অন্য অনেক দেশে পাওয়া যায় না। এগুলো আমার কথা নয়। আমি যা দেখেছি তাই এখানে তুলে ধরলাম। আপনারাও সহজেই তা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
দুটোর মধ্যে একটা ঠিক আর আরেকটা ভুল তা নয়, তবে অতি উৎসাহী হয়ে একটু বেশি বেশি ভালো করতে গিয়েই কিন্তু আমরা অনেক কিছু হযবরল করে ফেলি। আল্লাহ তায়ালা খুব সহজ একটা ধর্ম দিয়েছেন আমাদের এবং কোরআনে বহু জায়গায় তা বলেছেন। যা কঠিন করার তা আমরাই করে ফেলেছি। ভাবখানা এমন যে বেহেস্তে যাবার ব্যাপারটা পুরোপুরি গ্যারান্টি করে ফেলতে হবে। ইস কেউ যদি একটু কষ্ট করে কোরআন পরে দেখতো। আল্লাহ ছাড়া কারো এখতিয়ার নেই বলার যে কে যাবে বেহেস্তে আর কে যাবে না, গ্যারান্টি তো বহু দূরের কথা।
যাই হোক, এই অতিরিক্ত শব্দগুলো থাকুক বা না থাকুক সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে কিসের“সাক্ষ্য” দিচ্ছি আমরা? সাহাবীরা না হয় অন্তত রসুল (সঃ)কে নিজের চোখে দেখেছেন। আমরা না দেখতে পেলাম রসুল (সঃ) কে, না কোনদিন পাব আল্লাহকে দেখতে। তবে সাক্ষ্য দিব কি করে? আর যা দেখিইনি তাঁর সাক্ষ্য দিলেই কি না দিলেই কি?কে বিশ্বাস করবে আমার কথা? ভাববার ব্যাপার তাই না?
এখন তো রোজার দিন। সবাই একটু বেশি বেশি নামাজ কালাম পড়ছে। সেই সাথে না হয় একটু ভেবে দেখি আসলেই আমরা কিভাবে সাক্ষ্য দেব। পরবর্তী পোস্টে বলব এই ব্যাপারে আমার কি চিন্তা ভাবনা বা আমার মতে এই সাক্ষ্য আসলে কি?
[সতর্কবানীঃ আমি কোন আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ বা বিশেষজ্ঞ নই। আমি এখানে কাউকে কিছু শেখাতে আসিনি বা কোন মতবাদ দিতে আসিনি। এগুলোকে আমার নিজের সাথে নিজের কথোপকথন হিসেবে দেখাই ভালো। এ লেখা কারো ভালো লাগতে পারে, আবার কারো নাও লাগতে পারে। যদি এ ধরণের লেখা ভালো লাগে তবে দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন এবং কপি না করে শেয়ার করবেন।]