লেবুর খোসার নানান ব্যবহার

67

লেবুর খোসা দেহের ভেতরে ক্যান্সার কোষগুলোর বেড়ে ওঠার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এমন উপাদান যেমন, লিমোনিন ও সালভস্ট্রোল কিউ৪০ এর মতো উপাদান সরবরাহ করে।

সবধরনের লেবুর খোসাই পুষ্টিতে পরিপূর্ণ এবং এটি দেহে রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও, ত্বকের যত্নে লেবুর খোসার বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে এবং ঘরে ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসের সুরক্ষায়ও কাজে আসে।

লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ লেবুর খোসা ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে পারে। অ্যাসিডিক পরিবেশে ক্যান্সারের কোষগুলো বাড়তে থাকে। লেবুর খোসা দেহের ভেতরে ক্যান্সার কোষগুলোর বেড়ে ওঠার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এমন উপাদান লিমোনিন ও সালভস্ট্রোল কিউ৪০ এর মতো উপাদান সরবরাহ করে।

পুষ্টি সরবরাহ করেঃ লেবুর রসের মতো এর খোসাতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। বাস্তবতা হলো, লেবুর খোসা এর রসের চেয়ে প্রায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। প্রায় ১০০ গ্রাম লেবুর খোসায় ১৩৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ম, ১৬০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ১২৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি এবং ১০.৬ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।

হাড়কে মজবুত করেঃ ভিটামিন-সি এবং ক্যালসিয়াম আপনার হাড়কে মজবুত করতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যগত উন্নতি ঘটাতে পারে। লেবুর খোসার এ পুষ্টিগুলো প্রদাহজনিত পলি আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগও প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করেঃ ভিটামিন-সি এর অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল ক্ষমতা আপনার নাড়িভুঁড়ি/অন্ত্রের ভেতরে থাকা কৃমি ও পরজীবী জীবাণু মেরে আপনাবে রক্ষা করতে পারে। এর এই বৈশিষ্ট্য আপনার দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে বিভিন্ন ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।

যেভাবে খাবেন

লেবুর থেকে ছাড়ানো খোসা আপনি জমিয়ে শুকিয়ে রাখতে পারেন। যাতে এগুলোকে ভালোভাবে গুড়ো করে নিতে পারেন। এটা করার সহজ উপায় হলো ওভেন ব্যবহার করে ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় লেবুর খোসাগুলোকে ভাজাভাজা করা নিতে পারেন এবং সেঁকা খোসাগুলোকে পরে গুঁড়ো করে নিন। লেবুর খোসা গুঁড়ো বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। আপনি আপনার প্রতিদিনকার খাবার, পানীয়, অর্গানিক চা এবং স্যুপে লেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন।

গৃহস্থালী কাজে লেবুর খোসার ব্যবহার

সবধরনের পরিচ্ছন্নতায়ঃ আপনার ঘরের আসবাব, মেঝে এবং অন্যান্য ব্যবহার্য তৈজসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখতে আপনি পরিষ্কারক হিসেবে লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে লেবুর খোসাগুলোকে পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিন এবং পরে ছেঁকে নিন। এবার অ-বিষাক্ত ডিআইওয়াই ক্লিনার তৈরি করতে এ পানির সাথে প্রয়োজন মতো ভিনেগার বা বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন।

লেবুর খোসায় থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলোর দাগ তুলে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে। লেবুর খোসা দিয়ে তৈরি ক্লিনার ব্যবহারের বোনাস হিসেবে আপনার কাছে ধরা দিতে পারে সুগন্ধ।

দুর্গন্ধ দূর করতেঃ লেবুর খোসাগুলো প্রায়শই ফ্রিজ, বদ্ধ ড্রয়ার, ট্র্যাশ ক্যান ইত্যাদির ভেতরে তৈরি হওয়া দুর্গন্ধ দূর করে দিতে পারে। লেবুর খোসা আপনার মাইক্রোওয়েভ, কাটার বোর্ড এবং অন্যান্য ব্যবহার্য পাত্র পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে যাদুর মতো কাজ করতে পারে। বাটির পানিতে কয়েকটি লেবুর খোসা রেখে বাটিটি কিছু সময়ের জন্য আপনার মাইক্রোওয়েভের ভেতরে রাখুন। এটি মাইক্রোওয়েভের ভেতরের দুর্গন্ধকে সতেজ গন্ধে পরিণত করবে। কাটার বোর্ডকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য লেবুর খোসার সাথে লবণ মিশিয়ে ঘষুন। তারপরে ধোয়ে ফেলার পরে আপনি একটি নতুন বোর্ড পাবেন।

পোকা-মাকড় তাড়ানোর ওষুধঃ আপনার বাড়িতে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে খরচ কমিয়ে দিয়ে বিকল্প হতে পারে লেবুর খোসার ব্যবহার। বিশেষ করে পিঁপড়া, তেলাপোকা ইত্যাদি লেবুর গন্ধকে সহ্য করতে পারে না। সুতরাং, আপনি আপনার ঘরের কোণে বা কোণার মতো জায়গা যেমন বইয়ের তাক, আলমারি, রান্নাঘরের তাক, স্টোর রুম ইত্যাদিতে লেবুর খোসা ছড়িয়ে রাখতে পারেন। মশার মতো পোকার হাত থেকে আপনার ত্বককে বাঁচাতে আপনি লেবুর খোসার ব্যবহার করতে পারেন।

রুম ফ্রেশনার হিসেবেঃ লেবুর খোসা ব্যবহার করে আপনি ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক রুম ফ্রেশনার তৈরি করতে পারবেন। শুকনো ফুল এবং প্রয়োজনীয় তেলের সাথে লেবুর খোসা মেশান। এবার এ সাইট্রাস-সুগন্ধযুক্ত মিশ্রণটি একটি পরিষ্কার স্প্রে বোতলে রাখুন। এভাবে আপনি টাকা খরচ না করে আপনার ঘরকে সবসময় সুবাসিত রাখতে পারেন।

এছাড়া, ত্বকের যত্নেও লেবুর খোসার রয়েছে নানাবিধ ব্যবহারবিধি। একইসাথে পা-ফাটা কিংবা পায়ে ছত্রাক সংক্রমণের সমস্যা দেখা দিলেও লেবুর খোসার শরণাপন্ন হন অনেকেই।