করোনার সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, তা এখন আর নতুন করে বলার কিছু নেই। বাইরে বের হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়েছে বিশ্বের অনেক দেশেই। আর মাস্ক পরার কারণে মুখটাই থাকছে ঢাকা। তাই দিন দিনই কমছে প্রসাধনীর চাহিদা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, অন্য সব প্রসাধনীর চাহিদা কমলেও চোখের মেকআপ এর মধ্যে পড়ছে না। মাস্কঢাকা মুখে অভিব্যক্তি প্রকাশে যেন চোখই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখ প্রকাশ করছে মনের ভাষা।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, খুচরা ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী, আর্থিক বিশ্লেষণকারী মার্কিন গবেষণা সংস্থা এনপিডি বলছে, ঘরবন্দী অবস্থায় এবং পরে প্রসাধনী বিক্রির ক্ষেত্রে একটি বড় অংশ নিয়ে নেবে চোখের প্রসাধনী। এ কারণে এখন বেশির ভাগ সময় ঠোঁট মাস্কে ঢাকা থাকছে। এতে লিপস্টিক বিক্রি কমে যাচ্ছে।
করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পগুলোর অন্যতম হলো ফ্যাশনশিল্প। বাসায় বসে কাজ এবং ভিডিও কনফারেন্সের কারণে প্রসাধনীর চাহিদা ব্যাপক কমেছে। অনলাইন খুচরা বিক্রেতা আসস সম্প্রতি জানায়, মানুষ ঘরে আটকে থাকায় প্রসাধনী এবং স্পোর্টসওয়্যারের বিক্রি বিশেষভাবে কমে গেছে। মানুষ সুচিন্তিতভাবে কেনাকাটা করছে। পণ্য অর্ডার করলাম, আনার পর নিতে চাই না ফেরত দিলাম—এমনটা করছে না।
এনপিডির এক জরিপে দেখা গেছে, মাসকারা ও আই শ্যাডো বিক্রি লকডাউন-পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে বেড়েছে। ২২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৫ শতাংশ হয়েছে। অন্য দিকে লিপস্টিকের বিক্রি ১৪ শতাংশ থেকে কমে ১২ শতাংশ হয়েছে। মানুষ এখন চোখের মেকআপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে বেশি, কারণ মুখমণ্ডলের পুরোটাই ঢেকে রয়েছে মাস্কে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, লিপস্টিক প্রসাধনী বাণিজ্যের মূল আধার। ব্যবসার বিপুল ভান্ডারে বড় অংশীদার। অর্থনীতির মন্দাতেও এর চাহিদা কমেনি কখনো। আয়ের হিসাবে ‘লিপস্টিক ইনডেক্স’ ছিল সব সময়ই ঊর্ধ্বমুখী। ২০০১ সালে চালু হওয়া ইনডেক্সটি এখন নিম্নমুখী। লিপস্টিকই এখন মাস্কের আড়ালে ঢাকা পড়ছে। আমাজন জানায়, এপ্রিলে অনলাইনে লিপস্টিক বিক্রি কমেছে ১৫ শতাংশ। দামও কমেছে ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে মিডিয়া কোম্পানি কানতার জানায়, এপ্রিল, মে ও জুন—এই তিন মাসে চোখের প্রসাধনী বিক্রি বেড়েছে ২০৪ শতাংশ। ‘টেলিগ্রাফ’-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। টিকে থাকার লড়াইয়ে উৎপাদনকারীরা জোর দিচ্ছেন কাজল, আইলাইনার, মাসকারা, কিংবা আইশ্যাডো তৈরির ওপর।