সম্পা বণিক, ওয়াশিংটন ডিসি;
পাশা পাশি দু’টো দৃশ্যপট তুলে ধরলাম :
প্রথম দৃশ্যপট দেখে আমি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে রইলাম বেশ কিছু ক্ষণ । এই না হলে বঙ্গবন্ধু কন্যা ? মাতৃস্নেহে যিনি ভালোবেসে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে । সর্বশেষ ম্যাচে (বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার সাথে টেস্ট ) মোটা মুটি ম্যাচটা হারার পাল্লাটাই ভারী ছিল , কিন্তু খেলার মাঝা মাঝি সময় ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী যখন প্রবেশ করলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সোনার ছেলেদের উৎসাহিত করতে , তার পরটা তো ইতিহাস যা সারা বিশ্ব বিস্ময় হয়ে দেখলো । তার পর ঈদের দিন দেখলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে হাতে “সাকিব আল হাসানকে ” খাইয়ে দিলেন। আহা এইতো জননীর রূপ , সন্তানের গর্বে গর্বিত হওয়া , তাঁকে একটু এক্সট্রা ভালবাসা দেওয়া , উৎসাহিত করা আরো ভালো কাজ করার জন্য । আপনার এই প্রেমময়ী রূপের আমি একজন দীন পূজারী ।
আসুন এবার দ্বিতীয় দৃশ্যপটি তে যাই।
দ্বিতীয় দৃশ্যপটের মেয়েটির নাম “রূপা”যিনিও জীবন যুদ্ধে এক সংগ্রামী প্রত্যয়ী মেয়ে যে কিনা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অদম্য চেষ্টারত ছিল, কারো বোঝা না হয়ে আইনজীবী বা শিক্ষক হওয়ার সংগ্রামরত অদম্য প্রত্যয়ী এক তরুণী বগুড়া থেকে ছোঁয়া পরিবহনের বাসে করে ময়মনসিংহে ফিরছিলেন, তাঁকেই কি না ধর্ষণ ও খুনের শিকার হতে হয়েছে মানুষ নামের কতিপয় দুর্বৃত্তের পৈশাচিকতার।
মাননীয় প্ৰধানমন্ত্রী, হয়তো ক্রিকেট ম্যাচের মতো জীবনের ম্যাচেও এই মেয়েটি জিতে যেতে পারতো , পারতো নিজের অর্জিত অর্থে একটি বা দুই টি পরিবারের দ্বায়িত্ব নিজকাঁধে নিতে । পারতো শিক্ষক হয়ে জাতির মেরুদন্ড হয়ে কাজ করতে আর এই ভাবে
জীবন ম্যাচের জয়ী হওয়ার পর হয়তো তার দরিদ্র মাও ঠিক এই ভাবে মুখে তুলে আদর করে খাওযাতো ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কি মনে আছে ধর্ষক আর ধর্ষকের গড ফাদারদের রাজত্বে প্রতিবাদ করতে এক পিতা তার নির্যাতিত কন্যার সন্তানের জন্য বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচারের পরিবর্তে নিযার্তিত হয়ে, এই বিচার হীনতার সমাজকে কশাঘাত করে নিজ সন্তান কে নিয়ে নিজেই আত্মহত্যা করেন ।
হয়তো সবার চোখে আরো কিছু ধর্ষিত লাশের সাথে ওরা শুধু দুইটা লাশ যোগ হয়েছিলো মাত্র! অথচ এই লাশগুলো বলে গেলো কতোটা পচে গেছি আমরা! কতোটা পচে গেছে আমাদের বিবেক!
শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যান মতে গত তিনমাসে ১৭৬ জন শুধু শিশুই ধর্ষণের শিকার।
অল্প কিছুদিনের ভিতরে সোনার বাংলা যেন ধর্ষণের ঝড়ে প্লাবিত হচ্ছে
পাঁচ বছরের পূজাকে ব্লেডের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত যৌনাঙ্গ বা তিন বছরের সোনিয়াকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা,
মুয়াজ্জিন কর্তৃক ধর্ষিত ছোট্ট সুমাইয়ার লাশ পুকুরের পানিতে ভেসে উঠা ,
চলন্ত বাসে এক নারীকে তিনজন নরপশু ধর্ষণের পর অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। বগুড়ার তুফান–কাণ্ড, সিলেটের বদরুল–কাণ্ডসহ দেশের অসংখ্য নারী ধর্ষণ ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
আপনার কি দমবন্ধ হয়ে আসেনা এতোগুলি ধর্ষিতার পচা গলা লাশ দেখে ?
আজ ৬ মাসের শিশু থেকে বৃদ্ধ মহিলাও নরপশুদের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে । ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে জলায়শয় কোথায় নারী বা শিশুরা নিরাপদ বলতে পারেন ? একটি দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখতে পুরুষের পাশা পাশি নারীর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু এই ভাবে চলতে থাকলে আমাদের সামনে সমূহ অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে ।নারীদের রাখা হবে অন্তপুরে, পরানো হবে ছালার বস্তা তারপর যা হবে কন্যাশিশুর জন্মদান থেকে বিরত থাকবে পরিবার গুলো।ধর্ষণ নামক সংক্রামক ব্যাধি একটি অঙ্গের ভিতরে আর সীমাবদ্ধ নেই , ছড়িয়ে পড়েছে পুরো সমাজের মস্তিষ্কে । এর নিরাময় অত্যাবশ্যক ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার শাসন আমলে বাংলাদেশ উন্নয়নের জোয়ার ভাসছে ডিজিটাল বাংলাদেশ, কিন্তু এই জোয়ারে ভেসে আসছে বিষাক্ত সব নাগ নাগিনী। ধর্ষকের রাজত্ব হচ্ছে এই জোয়ারের এক অন্ধকার দিক। এ আমলেতো অনেক যুগান্তরকারী আইন হয়েছে , তবে কেন নিরীহ নারীদের নরপশুদের দ্বারা গণধর্ষিত হতে হয় প্রতিদিন? আমি আপনার উপর পূর্ণ আস্থা নিয়েই বলছি আমি জানি আপনিও সকল নারীদের মতোই শঙ্কিত এই নরপশুদের নিয়ে ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একজন রুপা, তনু বা পূজারা ধর্ষিত হয়না তার সাথে কিন্তু আমার আপনার প্রিয় দেশ বাংলাদেশ ও বার বার ধর্ষিত হয় ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষিতা নারীদের উদ্দ্যেশে বঙ্গবন্ধু বলে ছিলেন ”
” তোমারা তোমাদের পিতার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও আর ঠিকানা জায়গায় লিখে দাও ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার ”
আমরা কি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছ থেকে নারী হিসাবে এই দাবি রাখতে পারি না যে
” ধর্ষকের ঠিকানা হবে মৃত্যুদন্ড আর ধর্ষিতার ঠিকানা হবে প্রধানমন্ত্রীর আঁচল তলে ”
একটি যুগান্তর করি আইন করুন বিশেষ ট্রাইবুনালে ৩০ দিনের মধ্যে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করুন ।এই আইনটা করা হলে এই রকম পাপ করার দুঃসাহস দেখানোর ধৃষ্টতা মানুষের মাঝ থেকে বিলুপ্ত হতে বাধ্য।
আপনি যখন মায়ের ভূমিকায় তখন আপনি সাকিব আল হাসান নের ও মা ঠিক তেমনি সকল ধর্ষিতার ও মা । দয়াকরে আমাদের জন্য আমাদের মেয়ে শিশুদের জন্য বাংলাদেশকে বসবাস যোগ্য করে তুলুন , ধর্ষকের অভয়ারণ্য নয়|
বিঃদ্রঃ
অনেক আগের লিখা তখন ধর্ষণ এতটা বিশ্রী ভাবে বৃদ্ধি পায়নি । কিন্তু দুর্ভাগ্য হলে সত্যি যে বাংলাদেশের দুইটি বড় পত্রিকা আমার আমার এই লিখাটি খুব পছন্দ করে পাবলিশ করতে চেয়েছে ছিল । কিন্তু দুই একটা লাইন কর্তন করে । না পারি নি সেই দুই লাইন কর্তন করতে । আমরা তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথাই বলতে শিখিনি এখনো । শুধু রাতে ঘরে ফিরে নিজের বোন , কন্যা ও স্ত্রী কে সুরক্ষিত দেখেই স্বস্তির ঢেঁকুর তুলে ঘুমিয়ে থাকি । ঠিক উট যেমন ঝড়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য বালির ভিতরে মুখ লুকিয়ে রাখে । কিন্তু উট তো আর জানে না এই ঝড় ক্ষণস্থায়ী নয় বরং চিরস্থায়ী হয়ে সমস্ত অর্জন কে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে অন্ধকারের গহ্ববরে ।