একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ। ২০২১ সালে আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। প্রায় অর্ধশতাব্দীর এই দীর্ঘ পথযাত্রায় নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন নেহায়েত কম নয়। দেশের অর্থনীতির আকার ও আয়তন বেড়েছে। দারিদ্র্যপীড়িত একটি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। দুই দশকের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে রূপান্তরের মতো জাতীয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনেও চলছে তোড়জোড়।
মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হচ্ছে শিক্ষা। এ শিক্ষাক্ষেত্রেও ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দৃশ্যমান সাফল্য অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৪ শতাংশ। শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনেও বাংলাদেশ নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। শিক্ষা অবকাঠামোতেও উন্নতি সাধিত হয়েছে নজরে পড়ার মতো।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের সংখ্যা উল্লেখ করার দরকার নেই। উচ্চশিক্ষার কথাই যদি বলা হয়, তবে ইউজিসির ওয়েবসাইট বলছে, বর্তমানে দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৬, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৬ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ৩টি। সরকারি পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ আছে ৩০টি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৫। এ পরিসংখ্যান থেকে দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ২০১০ সালে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি পেয়েছি। যদিও এ শিক্ষানীতি এবং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক আছে। অবশ্য শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের এ অগ্রগতিকে অনেকেই মনে করছেন পরিমাণগত অগ্রগতি, গুণগত নয়। কারণ শিক্ষা খাতে কম ব্যয়কারী দেশগুলোর মধ্যে এখনও বাংলাদেশের অবস্থান। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আছে কেবল আফগানিস্তানের উপরে। শিক্ষায় জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ অথবা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তিন শতাংশের ঘর আমরা এখনও স্পর্শ করতে পারিনি।
শিক্ষাকে বলা হয় মানবজীবনের এক অমূল্য সম্পদ। কারণ সামগ্রিকভাবে একজন মানুষের বিকশিত হতে যেসব অপরিহার্য হাতিয়ার প্রয়োজন, তন্মধ্যে শিক্ষার স্থান সর্বাগ্রে। শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত সুপ্ত শক্তিকে উন্মোচিত বা বের করে আনার এক অনিবার্য উপায়। দার্শনিক প্লেটোর মতে, শিক্ষা হচ্ছে সেই শক্তি যার দ্বারা শিক্ষার্থীর দেহে ও মনের সব সুন্দর ও অন্তর্নিহিত শক্তি বিকশিত হয়। অ্যারিস্টটলের মতে, শিক্ষা দেহ-মনের সুষম ও পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনের প্রকৃত মাধুর্য ও পরম সত্য উপলব্ধিতে সহায়তা করে। আগেই বলা হয়েছে, সামগ্রিক দিক দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। পাঠ্যশিক্ষার হার বাড়ছে দিন দিন। প্রতিবছর লক্ষাধিক সাধারণ গ্র্যাজুয়েট, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত মানুষ আমাদের সমাজে যোগ হচ্ছেন।
কিন্তু শিক্ষিত মানুষের এ সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র কি শিক্ষার আসল সুফল পাচ্ছে? একদিকে বাড়ছে শিক্ষার হার ও শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা, অন্যদিকে সমাজে বাড়ছে মূল্যবোধের অবক্ষয়, হচ্ছে নৈতিকতার অধঃপতন। বাড়ছে অশ্লীলতা, দুর্নীতি ও নানা রকমের অপরাধপ্রবণতা। এসব অপরাধপ্রবণতার সঙ্গে যেমন সাধারণ অশিক্ষিত মানুষ যুক্ত আছেন, তেমনি শিক্ষিত মানুষও। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে অনৈতিক, অমানবিক ও অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে শিক্ষিত মানুষের সংশ্লিষ্টতাই বেশি দেখা যাচ্ছে। শিক্ষিত মানুষের সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ কতটা তলানিতে নেমে গেছে, বর্তমান করোনার মহাদুর্যোগেও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোতে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা।
মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আর এ শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হচ্ছে তার মনুষ্যত্ব, বিবেক ও বুদ্ধিবৃত্তি। তবে পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র জীব, যাদের ক্রমাগত অনুশীলন ও চর্চার মাধ্যমে প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। শিক্ষা মানুষকে এ কাজে সহায়তা করে। হার্বাট রিড বলেছেন, মানুষকে মানুষ করাই হল শিক্ষা। আদর্শ মনুষ্যত্ব অর্জনকেই শিক্ষা বলে অভিহিত করেছেন দার্শনিক কান্ট। একটি সমাজের ইতিবাচক বিকাশের জন্য প্রয়োজন আদর্শ ও মনুষ্যত্ব বোধসম্পন্ন মানুষের। একটি দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হওয়ারও পূর্বশর্ত হল নৈতিকতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসম্পদ। দেশে শিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে সন্দেহ নেই; কিন্তু নৈতিক, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ তৈরি হচ্ছে না। ফলে নাড়িছেঁড়া আত্মজার হাতে পিতা-মাতার হত্যার মতো ঘটনাও হরহামেশাই ঘটছে। নৈতিক ও মানবিক বোধ-বিবেচনা বর্জিত কোমলমতি শিশু, কিশোর ও যুবসমাজ জড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্তি, জঙ্গিবাদ, খুন, ধর্ষণের মতো মারাত্মক নানা অপরাধমূলক কাজে। পেশাজীবী ও কর্মজীবী মানুষ নির্দ্বিধায় ঘুষ-দুর্নীতির মতো অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অনৈতিক কাজের ফল হিসেবে দেশের ললাটে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের বৈশ্বিক তকমা যুক্ত হয়েছে।
পুনশ্চ উল্লেখ্য, বাংলাদেশে পুঁথিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হার বাড়ছে। তবে প্রসার হচ্ছে না সুশিক্ষার। সুশিক্ষা বলতে বোঝাতে চাচ্ছি মানবিক নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষাকে। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, সুশিক্ষা হল সেই শিক্ষা, যে শিক্ষা শিক্ষার্থীকে নৈতিক, মানবিক ও নীতিনিষ্ঠ মূল্যবোধসম্পন্ন করে তোলে। মানুষকে মিথ্যা, অন্যায় ও অসৎ পথ পরিহার করতে শেখায়। মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের আবিষ্কারই প্রকৃত শিক্ষা। এজন্য যথার্থই বলা হয়, শিক্ষা ও নৈতিকতা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। নৈতিকতা ও মানবিকতাবিবর্জিত শিক্ষা কুশিক্ষারই নামান্তর। আর এ কুশিক্ষা মানুষকে পশুর চেয়েও নিুস্তরে নামিয়ে ফেলে।
শিক্ষা অর্জনে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রাতিষ্ঠানিক পুঁথিগত শিক্ষার বাইরেও শিক্ষার জন্য বৃহত্তর পরিসর রয়েছে। এ শিক্ষা স্থান ও সময় নিরপেক্ষ। একটি শিশুর শিক্ষার সূচনা হয় তার পরিবার থেকেই। প্রাথমিকভাবে শিশুদের নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার পাঠ তার পরিবারের মাধ্যমেই শুরু হয়। সত্য বলা, কর্তব্যবোধ ও শৃঙ্খলাপরায়ণতা, সৎকাজ করা, অনৈতিক ও মূলবোধ গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন, আত্মত্যাগের মনোভাব, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, সর্বোপরি দেশপ্রেম ও সমাজ-রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববোধ ইত্যাদি বিষয়ে একজন শিশুর প্রাথমিক পাঠ তার পরিবার থেকেই হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের অধিকাংশ পরিবারেই এখন আর এসব সুনীতির চর্চা হয় না। বিশ্বায়নের এ যুগে ভোগবাদী জীবনদর্শনে প্রভাবিত অভিভাবকদের একটি বড় অংশই তাদের সন্তানদের আলোকিত মানুষ হওয়া নয়, বরং এমনভাবে গড়ে তুলতে চান যাতে করে তারা লেখাপড়া করে ভালো উপার্জন ও সচ্ছল জীবনযাপন করতে পারেন। এ কাজে সন্তানদের উপযুক্ত করার জন্য অনেক সময় অভিভাবকরাই অনৈতিক পথে হাঁটেন। সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে তথাকথিত ভালো প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পড়ানোর খরচ, বাড়তি কোচিং ফি ইত্যাদি জোগাতে গিয়ে অনেক অভিভাবক কর্মক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয় নেন। এমনকি এখন উচ্চমূল্যে পাবলিক পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার ফাঁসকৃত প্রশ্ন জোগাড় করেও অভিভাবকরা সন্তানের হাতে তুলে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। আর এমন অভিভাবকের কাছ থেকে সন্তানরা কীভাবে নৈতিকতা ও ন্যায়পরায়ণতার মূল্যবোধ শিখবে?
একজন শিশু বা কিশোরের নৈতিকতা ও সুকুমার বৃত্তির অনুশীলনের ক্ষেত্রে পরিবারের পরই কার্যকর অবদান রাখতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই। অথচ জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো বহু আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ চর্চায় বিভিন্ন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বাংলাদেশে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি রচিত হয় প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে যথার্থ শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শিশুদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসহ সার্বিক দিক দিয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের উন্নত চরিত্র গঠনের উপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা অন্তত মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত প্রসারিত করতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা অপরিহার্য। মার্কিন পণ্ডিত বব বেয়াউপ্রেজ মনে করেন, শিক্ষা হল একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, একজন অনুপ্রাণিত ছাত্র এবং একজন উদ্যমী অভিভাবকের মিলিত প্রতিশ্রুতির সমন্বয়। পিতা-মাতা সন্তান জন্ম দেন, একজন শিক্ষক সে সন্তানকে যোগ্যতর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। একজন আদর্শ শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর কাছে দার্শনিকের মতো। শুধু পাঠদানই নয়, শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও তাদের মধ্যে মানবিক দিকগুলোকে উদীপ্তকরণে একজন শিক্ষক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, ‘একজন শিক্ষকের জীবন শিক্ষার্থীদের সামনে খোলা বইয়ের মতো।’ অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা বই পড়ে যেমন জ্ঞানার্জন করে, তেমনি একজন নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন আদর্শ শিক্ষকের জীবনদৃষ্টান্ত অনুসরণ করে একজন শিক্ষার্থী নীতিনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তাই একজন প্রকৃত শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়মিতভাবে সেসব শিক্ষা দেবেন, যা তার মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ তৈরিতে সহায়তা করবে। তবে এ কথা সত্য যে, আজকাল শিক্ষার্থীদের সামনে অনুকরণীয় হওয়ার মতো শিক্ষকেরও অভাব দেখা দিয়েছে। অনেক শিক্ষক তার কর্তব্যজ্ঞান ও পেশাগত মূল্যবোধ ভুলে নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে শিক্ষকতাকে আর্থিক সুবিধা লাভের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। অনেকে আবার শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মাধ্যমেই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের বিষয়ে তাদের কোনো চেষ্টা বা উদ্যোগ নেই। অথচ চিত্তবিকাশ না ঘটলে, ভালো ও মন্দের বিচারবোধ তৈরি না হলে কারও পক্ষে যথার্থ শিক্ষিত হওয়া সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হল সুপ্ত মানবিক গুণাবলির সম্যক বিকাশ। এটি না হলে শিক্ষার উদ্দেশ্যই কেবল ব্যাহত হবে না, নৈতিক গুণাবলি, মানবিকবোধ ও চারিত্রিক দৃঢ়তাসম্পন্ন মানবসম্পদও তৈরি হবে না। অথচ সামাজিক অবক্ষয় রোধ, সমাজ সভ্যতার বিকাশ, সর্বোপরি দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য এরূপ মানবসম্পদের প্রয়োজন এখন সবচেয়ে বেশি।
জন মিল্টন প্রকৃত শিক্ষার বিকাশে ধর্মের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। ধর্ম মানুষকে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিহার ও অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত থাকতে শেখায় এবং মানুষকে সুনীতি ও মানতাবোধের শিক্ষা দেয়। কাজেই শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষারও ব্যবস্থা করতে হবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে যেন তারা নিজ নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। ধর্মের নামে কোনো কূপমণ্ডূকতা ও গোঁড়ামি যেন তাদের ধর্মীয় উগ্রবাদী কাজের সঙ্গে যুক্ত না করে ফেলে।
পুনশ্চ স্মর্তব্য, শিক্ষা মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য। তবে যে শিক্ষা মানুষকে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধে তাড়িত করে না, যে শিক্ষা মানুষকে স্বার্থান্ধ ও উগ্র ইন্দ্রিয়সুখে উদ্বুদ্ধ করে, যে শিক্ষা মানুষে মানুষে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ তৈরি করে, ভালোবাসার পরিবর্তে ঘৃণাকে উসকে দিয়ে সহিংসতার প্র্রসার ঘটায়- এমন শিক্ষা সুশিক্ষা নয়। আর এ ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষও প্রকৃত নয়, বরং ‘তাথাকথিত শিক্ষিত’। এরূপ শিক্ষিত মানুষ সমাজ-সংসার ও দেশের জন্য উপকারী নয়, বরং ক্ষতিকর। এরা শিক্ষিত বটে, তবে দুর্জন। আর দুর্জন শিক্ষিত হলেও পরিত্যাজ্য।
আগেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নামক যে স্বাধীন দেশটি আমরা পেয়েছি, তা অর্জনে ৩০ লাখ মানুষের জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে। এ দেশটিকে টেকসহ উন্নতি এবং আত্মমর্যাদার সঙ্গে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে দেশ থেকে দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচার দূর করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক চরিত্র বলে বলীয়ান, মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানবসম্পদের। আর এ কারণেই সময় এখন নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার প্রসারে মনোযোগী হওয়ার।