সময়টা ১৯৮০ সাল। ছোট্ট একটি কক্ষে চালু হয় বর্হিবিভাগ। চিকিৎসক ছিলেন একজন। পাঁচ বছরের মাথায় ১০ শয্যার অন্তবিভাগে রোগী ভর্তি শুরু। দিন দিন বেড়েছে এই হাসপাতালের কলেবর। বর্তমানে ১৪টি অন্তবিভাগ ও ২৫টি বর্হিবিভাগের মাধ্যমে চলছে চিকিৎসাসেবা। শয্যা সাড়ে ৬০০। এ গল্প চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের।
নগরের আগ্রাবাদের জাম্বুরি মাঠ সংলগ্ন এলাকায় হাসপাতালটির অবস্থান। বেসরকারি এই সেবা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় কার্যনির্বাহী কমিটির মাধ্যমে। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ভোটে নির্বাচিত হয় কমিটি। হাসপাতাল পরিচালনার ব্যয় অনেকটা অনুদান নির্ভর। কম মূল্যের চিকিৎসা ও ভালো সেবার জন্য সব মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে এটি।
হাসপাতালটি শিশু চিকিৎসার জন্য সুনাম কুড়িয়ে আসছে শুরু থেকে। এখন ৬০০ শয্যার মধ্যে ২৫০টিই বরাদ্দ শিশুদের জন্য। নবজাতকদের জন্য রয়েছে আরও ৫০ শয্যা। রয়েছে নবজাতক (১৪ শয্যা) এবং শিশু (১৬ শয্যা) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রও। এ ছাড়া হাসপাতালে দৈনিক গড়ে প্রসব হয় ২৫টি সন্তান। এর মধ্যে গড়ে অস্ত্রোপচার হয় ১০টি।
হাসপাতালের পরিচালক মো. নুরুল হক বলেন, এই হাসপাতাল ধাপে ধাপে এই পর্যায়ে এসেছে। ক্রমান্বয়ে নতুন নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। তবে মান যেন খারাপ না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য থাকে। এখন প্রতিদিন গড়ে এক হাজার রোগী হয় বর্হিবিভাগে। আর অন্তবিভাগে গড়ে রোগী থাকে ৫৮০ জন।
গত রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্হিবিভাগে রোগীর ভিড়। অভ্যর্থনা কক্ষের চেয়ারে সেবা প্রার্থীরা অপেক্ষা করছেন। ক্রম অনুসারে নিজের ডাক আসার জন্য অপেক্ষায় সবাই।
অপেক্ষায় থাকা শামীমা আক্তার নামে এক নারী বলেন, আমার শিশুটির কয়েক দিন ধরে জ্বর। তাই বর্হি বিভাগে দেখাতে এসেছি। আমরা এই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়ে থাকি। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো।
মো. ইমন হোসেনের ছেলে আবরারকে (৪) জ্বরসহ গত শনিবার ভর্তি করানো হয়। ইমন হোসেন বলেন, ‘জ্বর বেশি থাকায় এখানে নিয়ে আসি। চিকিৎসকেরা ভর্তি করিয়ে দিতে বলেন। এখন অনেকটা সুস্থ। হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমরা সন্তুষ্ট।’
মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন বোনের সঙ্গে এসেছেন বড়ভাই জাহিদ হোসেন। হালিশহরের এই বাসিন্দা বলেন, ‘হাসপাতালটিতে আমরা সবাই চিকিৎসা নিই। আমার ছেলেমেয়ের জন্মও এখানে।’
চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে। ওই বিভাগের চিকিৎসক ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. আবু সৈয়দ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ অনেক উন্নত। অন্ত ও বর্হি বিভাগে শিশু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।’
প্রসূতি বিভাগেও ভিড় ও ব্যস্ততা বেশি। ১৯৯২ সালে এই বিভাগ চালু করা হয়। এ ছাড়া মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগেও বেশি রোগী থাকে। হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ৩০টির মতো অস্ত্রোপচার হয়। মোট অস্ত্রোপচার কক্ষ রয়েছে সাতটি। এ ছাড়া রয়েছে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে এখানে ব্লাড ট্রান্সফিউশন (রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ) সেন্টার চালু করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে চালু হয় ইকো কার্ডিওগ্রাফি বিভাগ, বয়স্কদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ও গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টলজি বিভাগ। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মেডিকেল কলেজ। বর্তমানে হাসপাতালটির সামনে একটি ১৩ তলা ভবন নির্মিত হচ্ছে। ওই ভবনে হাসপাতালটি সম্প্রসারিত হবে। মোট শয্যা দাঁড়াবে সাড় ৮০০। হাসপাতাল ভবনের হবে সাড়ে পাঁচ লাখ বর্গফুটের। বর্তমানে হাসপাতাল রয়েছে দেড় লাখ বর্গফুটের চার তলা ভবনে। হাসপাতাল ও কলেজ ক্যাম্পাসের মোট আয়তন এখন ৪ দশমিক ২৬ একর।
হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আনজুমান আরা ইসলাম বলেন, একটি ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণ করারও পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে। এ জন্য অর্থ সংগ্রহও শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্যানসার হাসপাতালের জন্য শূন্য দশমিক ৯৪ একর জমি দিয়েছেন।
তবে হাসপাতালের কার্যক্রম ব্যাঘাতের একমাত্র কারণ জলাবদ্ধতা। গত ২৩, ২৪ ও ২৫ জুলাই হাসপাতালের নিচতলায় প্রায় তিন ফুট পরিমাণ পানি ওঠে।
পরিচালক মো. নুরুল হক বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য প্রতি বছর ভুগতে হয়। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। নতুন ভবনে না যাওয়া পর্যন্ত এই ভোগান্তিতে থাকতে হবে মনে হচ্ছে।