‘আজকের তরুণরাই আগামীর মহাকাশ গবেষণার কাণ্ডারী’

29

আরিফুল হাসান অপু। দীর্ঘদিন ধরে মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আয়োজিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-এর পর পর তিনবার বাংলাদেশের আহ্বায়ক ছিলেন। এছাড়াও বেসিসের এই সাবেক পরিচালক দেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইনোভেশন কালচার তৈরি করতে প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম।

একইসাথে তিনি নাসা ও মাহকাশবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠিত স্পেস অ্যাপস বাংলাদেশের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আরিফুল হাসান অপু সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রধান কার্যালয়ে মুখোমুখি হন । একান্ত আলাপে জানান মহাকাশ বিজ্ঞানকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নানান পরিকল্পনার কথা।

আপনি মহাকাশ বিজ্ঞান ও নাসার বিভিন্ন আবিষ্কার নিয়ে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ এখন মহাকাশে স্থান করে নিয়েছে। বিষয়টাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন।

আরিফুল হাসান অপু : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। এটা গোটা জাতির জন্য বিশাল একটা গৌরবের ব্যাপার। এটা সারা বিশ্বে দেশের ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক বড় উদ্যোগ। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছি যে, আমরা মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে কাজ শুরু করেছি।

কম্পিউটারবিজ্ঞানকে জাতীয় শিক্ষায় স্থান দেয়া হয়েছে। মহাকাশ বিজ্ঞানকে জাতীয় শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে আপনার মত কি?

আরিফুল হাসান অপু : আমি মনে করি, মহাকাশবিজ্ঞান বিষয়টি জাতীয় শিক্ষাকার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এটা এখন সময়ের দাবি। কেননা ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আমরা মহাকাশে জায়গা করে নিয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারবিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে গেছে। তারা নানা ধরনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় সরকারকে সহায়তার সাথে সাথে নাসা, গুগলসহ বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে আমাদের সন্তানরা কাজ করছে। একইভাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১এর পরে আরো অনেক কাজ হবে। তাই মহাকাশবিজ্ঞান বিষয়টিকে আমাদের জাতীয় শিক্ষাকার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করলে পরবর্তীতে এটা অনেক সুফল বয়ে নিয়ে আসবে।

আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মহাকাশবিজ্ঞান শিক্ষার কতটা প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?

আরিফুল হাসান অপু : যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রক্ষণাবেক্ষণের গ্রাউন্ড স্টেশন বাংলাদেশেই তৈরি করা হয়েছে, সেহেতু এই স্যাটেলাইটকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা মহাকাশবিজ্ঞান শিক্ষায় উৎসাহী হবে। ইতোমধ্যেই আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। আগে তারা এসব বিষয় নিয়ে শুধু বইয়ে পড়শুনা করত। এখন সেটা তারা বাস্তবে জানার সুযোগ পাবে। ইতোমধ্যেই যারা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করছে বা বিজ্ঞানী হওয়ার চেষ্টা করছে তাদের জন্যও এটা নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দিয়েছে। যার ফলে ভবিষ্যতে মহাকাশে এই ধরনের আরও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সহজতর হবে।

মহাকাশবিজ্ঞান শিক্ষাকে নিয়ে আপনার কোনো কার্যক্রম রয়েছে কিনা?

আরিফুল হাসান অপু : মহাকাশবিজ্ঞান ও নাসার কার্যক্রমকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অমরা ইতোমধ্যে `স্পেস অ্যাপস বাংলাদেশ’ নামে একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তুলেছি, যার মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, নাসার সাবেক প্রধান বিজ্ঞানী ও জন অ্যান্ড এড্রিন মার্স-এর পরিচালক এলেন স্টুফান আমাদের এই ফোরামকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাংলাদেশের কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে এ কার্যক্রমকে তিনি এগিয়ে নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এ বিষয়ে আপনাদের কোনো কার্যক্রম রয়েছে কিনা?

আরিফুল হাসান অপু : আগামী জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মহাকাশে নভোচারীর জীবনযাত্রা নিয়ে একটা প্রোগ্রামের আয়োজন করছি। এখানে নাসার একজন সাবেক নভোচারীর স্কাইপিতে সরাসরি যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। মহাকাশে নভোচারীরা কীভাবে মহাকাশে যান, সেখানে গিয়ে তাঁরা কি করেন, তাঁদের জীবনযাত্রাসহ নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়াও ইতোমধ্যে মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নাসা। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলগ্রহে নভোচারীদের জীবনযাত্রা কেমন হবঈ, নিজের কল্পনায় তার ৩-৫ মিনিটের একটা অ্যানিমেটেড ভিডিও বানানোর প্রতিযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে নাসা। বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে ২০ হাজার ডলার। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আগামী মাসে স্পেস অ্যাপস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটা প্রোগ্রামের আয়োজন করা হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় আমাদের নবীন তরুণ-তরুণদের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও আগামী এক বছেরের কর্মপরিকল্পনা শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই বিষয়ে জ্ঞানার্জনে উৎসাহী করতে আপনি কী ভাবছেন?

আরিফুল হাসান অপু : নতুন প্রজন্মকে উদ্ভাবনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার জন্য আমরা বছরব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, ওয়ার্কশপ, গবেষণার মাধ্যমে তাদেরকে মহাকাশবিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।