অনুপের অর্জন

14

গ্লোবাল সুইড অ্যাওয়ার্ড পাওয়া অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনুপ (পেছনে, বাঁ থেকে ষষ্ঠ)। ছবি: পার্ল ই কার্লসন

 

গ্লোবাল সুইড অ্যাওয়ার্ড পাওয়া অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনুপ (পেছনে, বাঁ থেকে ষষ্ঠ)। ছবি: পার্ল ই কার্লসনভিনদেশে পড়তে যাওয়ার আগ্রহ ছিল অনুপ ব্যানার্জির। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল আর চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা শেষ করে বিবিএ ও এমবিএ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে। রাত জেগে তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতেন, কোথায় কী বৃত্তির সুযোগ আছে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কী চাহিদা…সব টুকে রাখতেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের ইমেইল করতেন। এরই মধ্যে পেলেন সুইডিশ ইনস্টিটিউটের বৃত্তির খবর। আবেদন করলেন। সুযোগও পেলেন। সুইডেনে পড়তে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমেও সক্রিয় হয়ে ওঠেন অনুপ। আর সেই সুবাদেই সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সুইডিশ ইনস্টিটিউট থেকে সম্প্রতি ‘গ্লোবাল সুইড অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন তিনি। অনুপ জানালেন, তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই সম্মাননা পেয়েছেন। বর্তমানে সুইডেনের জনকপিং ইউনিভার্সিটিতে গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টে এমএসসি ডিগ্রি নিচ্ছেন অনুপ ব্যানার্জি।

গ্লোবাল সুইড অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সুইডিশ ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে। এ পুরস্কারটি প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো, অন্যান্য দেশ থেকে সুইডেনে পড়তে আসা সেই সব শিক্ষার্থীকে স্বীকৃতি জানানো, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীলতা ও উদ্যোগের মাধ্যমে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুইডেনকে বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজনকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয় এবং স্বীকৃতিস্বরূপ একটি ডিপ্লোমা প্রদান করা হয়। স্টকহোমে সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই ডিপ্লোমা প্রদানের পর্বটি হয়ে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও গত ৮ মে হয়ে গেল এই পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান। এ বছর ১৭টি দেশের ২০ জন ছাত্রছাত্রী গ্লোবাল সুইড অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনুপ জনকপিং বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে গ্লোবাল সুইড অ্যাওয়ার্ডে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান।

পুরস্কার পাওয়ার পেছনের গল্পটা এবার শুনি। অনুপ বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম, সুইডেন আসার পর থেকেই ভাবছিলাম কীভাবে গ্লোবাল কমিউনিটিতে যুক্ত হওয়া যায়, কীভাবে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জে নিজেকে নতুন করে জানা যায়।’ তবে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ তিনি পেয়েছিলেন সুইডেন যাওয়ার ঠিক দেড় মাসের মাথায়। সুইডিশ ইনস্টিটিউটের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি, যেখানে বিগত বছরের বৃত্তি পাওয়া তিন শিক্ষার্থী প্রেজেন্টেশন দিচ্ছিলেন। কীভাবে তাঁরা সুইডিশ ইনস্টিটিউটের একটি বিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন, শিক্ষাসফরের আয়োজন করেন, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জ্ঞান ও নেতৃত্বের চর্চা করেন- এসব নিয়েই কথা হচ্ছিল। অনুষ্ঠান শেষে অনুপ যোগাযোগ করেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। খুব বেশি চিন্তাভাবনা না করেই ‘সুইডিশ ইনস্টিটিউট নেটওয়ার্ক ফর ফিউচার গ্লোবাল লিডারস ইয়ংশপিং চ্যাপ্টার’-এর দায়িত্ব নিয়ে নেন তিনি।

পুরস্কার হাতে অনুপ ব্যানার্জিপুরস্কার হাতে অনুপ ব্যানার্জিএই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এবং সুইডিশ ইনস্টিটিউটের আর্থিক সহায়তায় গত দুই বছরে অনুপ এবং তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা মিলে আয়োজন করে ফেলেন বেশ কয়েকটি প্যানেল আলোচনা, কর্মশালা। আয়োজন করেন ভলভোর মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাসফর এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ইউএন সিটিতে সফরসহ বেশ কিছু অনুষ্ঠান। অনুপ বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যম আর নিউজপোর্টালে আমাদের এই উদ্যোগগুলো প্রচার করা হয় এবং স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ বক্তৃতা প্রদানের আমন্ত্রণ পাই সুইডিশ ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে। ঠিক এক বছর আগে এ রকম একটা অনুষ্ঠান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে শুরু করেছিলাম আমি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বছর থেকেই বিজনেস স্কুলের ম্যাগাজিনে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন নিজেকে। দ্বিতীয় বছরে এসে যুক্ত হয়েছেন স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ‘ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাক্টিভিটি কমিটি’তে। এতকিছুতে যুক্ত হতে গিয়ে একাডেমিক পড়াশোনায় তিনি পিছিয়ে পড়েননি। পারিবারিক ব্যবসা উন্নয়নের একটি কোর্সে কেস অ্যানালাইসিস এবং ভালো ফলাফলের জন্য ‘টফট স্কলারশিপ ফর ফ্যামিলি বিজনেস অ্যান্ড ওনারশিপ স্টাডিজ’ পুরস্কার পান তিনি।

অনুপের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। জানালেন, ভবিষ্যতে শিক্ষক হয়ে গবেষণাধর্মী কাজে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে তাঁর।