সকলেই কবি নয়

495

Mohammed Anam
✿♥✿সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ আবার কবিও বটে (বিনোদনমূলক)✿♥✿

কোন এক সময়ে এক কবি বলেছেন! কাব্য চর্চা কতই না সহজ!!
রবীন্দ্রনাথের জন্য আমরা লিখতে পারি না কিছু;
নজরুল আবার লিখেছিলেন কিছু তার পিছু পিছু;
জসীমউদ্দীন বুদ্ধি করে হলেন পল্লি কবি;
সুফিয়া কামাল তার সাথে সাথে আঁকেন পল্লী ছবি;
সত্যন্দ্রনাথ সুকুমার রায় দিলেন প্রাণ ছড়ায়
আর কি বাকি থাকে কাব্য করার বিষয়?
জীবনানন্দ উদাস হইয়া লেখে প্রকৃতির কথা;
আহসান হাবিব শামসুর রহমান ঘামান কাব্যে মাথা;
আধুনিক কবিতায় দেখি তাই আজ বিষয়ের বড় অভাব;
অভাবে পড়লেই নাকি শুনেছি নষ্ট হয় স্বভাব।

কবি আর কবিতা। একই শরীরের দুটি অংশ। কবি না থাকলে কবিতার জন্ম হয়না আবার কবিতা না হলে কাউকে কবি বলা যায় না। কবিতা কাকে বলে, এমন প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর খোঁজা মরীচিকার পেছনে ঘুরারই নামান্তর। অসাধ্য সংজ্ঞা নির্ণয়। মানবিক মানসিকতার রূপান্তর প্রক্রিয়াই কবিতার মূল নির্দেশক। সমকালের সাথে সর্বকালের অন্তর্নিহিত সত্য থেকেই কবিতার জন্ম। হৃদয় আর মগজ মিলে একাকার হওয়ার পর সার্থক সংশ্লেষে কবিতার সার্থকতা। ইন্দ্রিয়-বেদ্য জগতের রূপ-রস গন্ধ যখন কবি মনের গভীরে আঘাত করে তখনই প্রকাশ পায় শিল্পসম্মত কিছু পংতি।

কবিতার সংজ্ঞা নির্ণয়ে কতো রকম প্রচেষ্টা হয়েছে তার হিসাব পাওয়া যায়না। অগণিত নান্দনিক প্রচেষ্টায় কবিতাকে স্বরূপে পাওয়ার আকুলতায় কতো চমকপ্রদ কথার সৃষ্টি। তারপরও কবিতা সংজ্ঞাহীন। শেষপর্যন্ত অমীমাংসিত দ্বন্দ্বের মতই কবিতার অবস্থান। পাঠক কিংবা লেখকর উপলব্ধিতেই কবিতার আসল রূপ ফুটে ওঠে। প্রত্যেকে নিজের পরিমিত মননের সাধ্যে অনুভব করতে হয় কবিতার সত্যকে। সূত্র বা প্রশংসার তর্কে জড়িয়ে আর লাভ কি? তাহলে কবিতা কি ? অপূর্ব নির্মাণ ক্ষমতার প্রেক্ষিতে বেরিয়ে আসা জীবনবোধের পরিমিত শাব্দিক বিশ্লেষণ! যখন একটা লেখা শব্দ ও অর্থের সংযুক্ত ধারায় ভাবের জগতে আলাদা অনুভূতির সৃষ্টি করে তাকে আমরা কবিতা বলি।

পণ্ডিত স্যামুয়েল জনসন বলেন, ‘কবিতা ছন্দবদ্ধ রচনা’ ‘মেকেলে’ কবিতার ক্ষেত্রে বলেছিলেন ‘কবিতা বলতে আমরা সেই শিল্পকে বুঝি যেখানে শব্দ এমনভাবে ব্যবহৃত হয় যাতে পাঠকের কল্পনা-লোকে ঐ শব্দ-রাজীর একটি চিত্রিত সৌন্দর্যের বিশ্ব উন্মুক্ত করে দেয়। আর ‘কোলরিজ’ বলেন কবিতা হচ্ছে; “সেরা শব্দসমূহের শ্রেষ্ঠ বাণী বিন্যাস।’

কবি, যার হৃদয়ে কল্পনা এবং কল্পনার ভেতরের চিন্তা মানব মনের অলিতে গলিতে বিচরণ করে। “নিছক কারিগরি দক্ষতা থেকে সুশ্রাব্য পদ্য বা ছড়া লেখা যেতে পারে কিন্তু কবিতা কেবলমাত্র দক্ষতা-জাত নয়” কুন্তল চট্টোপাধ্যায়ের একথার মর্মার্থ তাহলে কি? তাহলে কি কবি প্রতিভার সাথে আত্মিক কোন সম্পর্কের প্রয়োজন? তারমানে হচ্ছে যিনি প্রতিভার সাথে সাথে অন্যরকম আবেগ-চেতনা লালন করে বিশেষ রূপময় শরীরের লেখা প্রসব করেন তিনিই কবি।‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ এজন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ ক’টা লাইন বারবার মনে পড়ে: “অন্তর হতে ‌আহরি বচন/আনন্দলোক করি বিরচন/গীত রসধারা করি সিঞ্চন/সংসার ধূলি জালে।” আর এজন্যই কি “জীবনানন্দ দাস” বলেছিলেন, “সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি।” যেমন কবি বলেছেনঃ

(১) কবিগুরু কহিলেন আসি আমার কানে কানে,
“ওহে নরাধম, জানিস কি তুই ভালোবাসার মানে?”
আমি কহিলাম, “না গুরু!” খেপিয়া গেলেন তিনি।
…কপালে তুলিয়া ভ্রু, কহিলেন, “ওরে গাধা ছেলে,
এতদিন তুই এই শিখেছিস দশ কেলাসে পড়ে?”
আমি কহিলাম, “গুরু, তুমি থাকিতে চিন্তা কি মোর? শেখাও না হাতে ধরে।”
কবি কহিলেন, “হায়! ঐ একটা কথাই জানিতে গিয়া জীবন করেছি ক্ষয়।
সাধেই কি আর লিখিয়াছিলাম – সখী, ভালোবাসা কারে কয়?”

প্রেম বড় অদ্ভুত। আর বিরহ হইলো তাহার অদ্ভুতপণার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।

(২) গুরুদেবের চরণে যতই পরে থাকি না কেন সাহিত্য বুঝি কম, বুঝি অঙ্কের হিসেব। তাই গুরুদেবের কাছ থেকেই আবিষ্কার করেছি ভালোবাসার গণিতিক সূত্র। গুরুদেব বলেছেনঃ

হৃদয়ে হৃদয়ে আধো পরিচয়,
আধখানি কথা সাঙ্গ নাহি হয়,
লাজে ভয়ে ত্রাসে আধো বিশ্বাসে
শুধু আধখানি ভালোবাসা।
এই আধখানা ভালোবাসাকে ২ দিয়ে গুণ করলেই বুঝি পুরো ভালোবাসা পাওয়া যাবে!!

সবখানেই প্রেম ও ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। আপনার কাজ শুধু তার সন্ধান করে তাকে খুঁজে বের করা। একদিন দেখবেন আপনার জীবনে কোন কষ্ট নাই। আপনি ভালো আছেন। ভালোবাসার সাথে আছেন। ধন্যবাদ।

তথ্য-সূত্রঃ  আর্ন্তজাল থেকে।